বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ বলেছেন, সকলকে মিলেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়। সবাই মিলে এটিকে গড়ে তুলতে হবে। এখানে কারোর ভুমিকা কারোর থেকে নগণ্য বা বড় নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। কারন এখান থেকেই দেশ সেরা মেধাবীরা বের হয় দেশ গঠনের শিক্ষা নিয়ে।
তিনি আজ (২০ সেপ্টেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের দু’দিন ব্যাপী ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই স্কলার। একজন শিক্ষক হিসেবে অন্যজন শিক্ষার্থী হিসেবে। তিনি “শিক্ষার্থীদেরকে সমাজের সমস্যা বুঝতে শেখানোর আহবান জানান।
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সমস্যার সমাধানের পথও বাতলে দিতে হবে। তাদেরকে সপলতার পথ দেখাতে হবে, যাতে তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে সমাজ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে।
শিক্ষার্থীদের আবেগ গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রফেসর ফায়েজ বলেন,“শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়েই গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক বিষয় আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও, এর ভেতরেই একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিহিত থাকতে পারে। একজন শিক্ষার্থী হয়তো সেই ক্ষুদ্র বিষয় থেকেই তার উন্নয়নের চিন্তা শুরু করছে।
“জুলাইয়ের মতো একটি আন্দোলন সফল হওয়ার পেছনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অসাধারণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন “তোমরা পেরেছ বলেই আজ আমাদের প্রত্যাশা তোমাদের কাছে অনেক বেশি। তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে এই দেশ, এই জন্মভূমি, এই জাতি। তোমরা যা দেখিয়েছিলে, তা শুধু এই দেশ নয় পুরো বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসুরুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. এয়াকুব আলী এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওরিয়েন্টেশন প্রথম দিনের আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বেগম রোকসানা মিলি। উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মনজুরুল হক।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে ৫টি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের সবার সম্মিলিত সম্পদ। এটিকে নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাবতে হবে, নিজের ঘর হিসেবে ভালোবাসতে হবে। যখন আমরা প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করব, তখনই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির জন্য প্রত্যেকের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা, শিক্ষকদের আন্তরিক পাঠদান, কর্মচারীদের নিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীদের মনোযোগী অধ্যয়ন—সব মিলেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত রূপ গড়ে ওঠে। তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. এয়াকুব আলী তার বক্তব্যে বলেন, “একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পেছনে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। এর একমাত্র লক্ষ্য হলো দেশের জন্য সফল, দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক তৈরি করা।”
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তোমাদের অবশ্যই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। নিজেদেরকে শুধু ডিগ্রিধারী নয়, বরং প্রকৃত অর্থে সেই দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
একই সঙ্গে তিনি সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এজন্য তিনি শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার এবং কর্মচারীদের শিক্ষার্থীদের সেবায় আন্তরিকভাবে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানান।
ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার মহৎ দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব আমাদের সবার কাঁধে। এই দায়িত্বকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব। আমি প্রতিটি ক্লাসে যাব, প্রতিটি অনুষদে যাব এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। তোমাদের অগ্রগতি, সমস্যাবলী ও স্বপ্নের কথা শুনব। বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত, প্রাণবন্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে তুলতে আমি সবসময় তোমাদের পাশে থাকব।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো ধারাবাহিক শিক্ষার সর্বোচ্চ ধাপ। এখানে এসে তোমাদের পূর্ণ জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এর পর আর কোনো ধারাবাহিক শিক্ষার স্তর নেই। তাই এখান থেকেই তোমাদেরকে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। যদি এই সুযোগ হারাও, তবে তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “সফলতার প্রধান শর্ত হলো কঠোর পরিশ্রম। পৃথিবীতে কোনো মানুষ পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য অর্জন করেনি। আজ তোমাদের যে স্বপ্ন, যে লক্ষ্যে এগিয়ে চলা, তা অর্জনের একমাত্র পথ নিরলস প্রচেষ্টা।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আশরাফ উদ্দিন খান পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন। এরপর চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী বিজয়ী কর্মকার পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন এবং উনুক্ত চাকমা ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে একটি তথ্যবহুল ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ৫ অনুষদের ২২টি বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষদভুক্ত শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মনজুরুল হক, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. খন্দকার তৌহিদুল আলম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বাবলি সাবিনা আজহার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান খান।
আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহিনুজ্জামান, প্রভোস্টদের পক্ষে সাদ্দাম হোসেন হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. হামিদা খাতুন, বিভাগীয় চেয়াররম্যানদের পক্ষে লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি আহ্বায়ক এস. এম. সুইট।
অনুষ্ঠানে জিএসটিভুক্ত পরীক্ষায় মেধাবীদের পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম ও সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক মো. হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।